আফগানিস্তানে উগ্রপন্থীদের খুঁজতে দুই কোটি ৫০ লাখ আফগানির বায়োমেট্রিক ডেটা তালিকাবদ্ধ করার প্রকল্প চালু করেছিলো মার্কিন সামরিক বাহিনী। দেশটির নিয়ন্ত্রণ তালেবানদের হাতে যাওয়ার পর আশঙ্কা করা হচ্ছে, ওই বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবহার করে মার্কিন মিত্রদের উপর চড়াও হতে পারে তালেবানরা।
তালেবানদের হাতে বায়োমেট্রিক ডেটা যাওয়ার ফলে আফগানিস্তানের মার্কিন মিত্ররা যে জীবন ঝুঁকিতে আছেন, সেই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে রয়টার্স ও দ্য ইন্টারসেপ্টসহ একাধিক সংবাদমাধ্যম।
দ্য ইন্টারসেপ্ট জানিয়েছে, প্রাথমিক অবস্থায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রকল্প হিসেবে শুরু হয়েছিলো আফগানিদের বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহের কাজ। পরবর্তীতে স্থানীয় মার্কিন দূতাবাস এবং জোট সরকারের হয়ে কর্মরত বেসামরিক আফগানরাও যোগ হন ওই প্রকল্পের আওতায়।
আফগানিদের বায়োমেট্রিট ডেটা সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত ‘হ্যান্ডহেল্ড ইন্টারএজেন্সি আইডিন্টিটি ডিটেকশন ইকুইপমেন্ট (হাইড)’ ডিভাইসগুলো এখন তালেবানের হাতে। চোখের আইরিস স্ক্যান করে সংগ্রহ করা ডেটা, আঙ্গুলের ছাপ ও জীবনবৃত্তান্তসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত হয়েছে ডিভাইসগুলো।
তবে তালেবানরা ওই ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারবে কি না, অ্যাক্সেস করতে পারলেও ওই ডেটার ভিত্তিতে তারা কোনো আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিতে পারবে কি না, সেই ব্যাপারে বিতর্কের সুযোগ আছে বলে জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট দ্য ভার্জ।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক সাবেক সদস্যের বরাত দিয়ে দ্য ইন্টারসেপ্ট জানিয়েছে, ওই ডেটা ব্যবহার করার মতো আনুসাঙ্গিক যন্ত্রপাতি তালেবানদের হাতে নেই। বরং ওই ডিভাইসগুলো পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশি দেশগুলোর গোয়েন্দা সংস্থার হাতে যাওয়ার ভয়ই বেশি।
অন্যদিকে, গত পাঁচ বছর ধরে তালেবানরা সরকারি বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবহার করে আফগান সামরিক বাহিনীর সদস্যদের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে বলে স্থানীয় প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স। আফগান সামরিক বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করতে একটি ডেটাবেইজে থাকা তথ্যের সঙ্গে তাদের আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে দেখা হতো বলে জানিয়েছে সংবাদসংস্থাটি।
বিতর্কের জল ঘোলা হলেও, ওই বায়োমেট্রিক ডেটাবেইজের কারণে অসামরিক আফগানদের জীবন যে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই। এমন অবস্থায় বায়োমেট্রিক স্ক্যান এড়িয়ে যাওয়া এবং অসামরিক জনগনের ডিজিটাল পরিচয় নিরাপদ করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ভার্জ। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইংরেজি, ফার্সি এবং পশতু ভাষায় বায়োমেট্রিক পরিচিতি এবং ডিজিটাল পরিচয় রক্ষা করার গাইডলাইন প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ফার্স্ট’।