শরীয়তপুর সদর হাসপাতালকে ঘিরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে গড়ে উঠেছে অন্তত ২০টি বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিক।
স্বাস্থ্যসেবার নামে সেখানে চলছে নানামুখী রমরমা ব্যবসা। বিধিবিধান রয়েছে, সরকারি হাসপাতালের ন্যূনতম ৫০০ গজের মধ্যে কোনো বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করা যাবে না।
অথচ নিয়মবর্হিভূত ভাবে শরীয়তপুর শহরে অবস্থিত ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ঘিরে গড়ে উঠেছে অনেক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যাদের বৈধ কোন লাইসেন্স নেই।
হাসপাতালের গেটের আশেপাশেই রয়েছে ১৫টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। যার দূরত্ব রয়েছে মাত্র ১০ থেকে ৫০ গজের মধ্যে। আর ২০০ থেকে ৩০০ গজেরা মধ্যে রয়েছে আরো ৩টি। যাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে রয়েছে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা, দালালের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালের রোগী ধরার ফাঁদ ও স্বাস্থ্যসেবার নামে নানামুখী ব্যবসার অভিযোগ।
প্রত্যেকটি ডাক্তারের রুমে রয়েছে ৪-৫ জন দালাল। দালালদের তাড়নায় ডাক্তারদের রুমে রোগীদের ঢোকা কষ্টসাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে।
সরকারি হাসপাতালের অধিকাংশ ডাক্তার এসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডিউটি করেন। কোনো কোনো ডাক্তার বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবসায়িক পার্টনারও। স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এসব জানেন, দেখেন ও শোনেন কিন্তু কোনোরূপ ব্যবস্থা নেন না। কেন ব্যবস্থা নেন না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।
শরীয়তপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপনে শুধু ৫০০ গজের মধ্যের বিষয়ই নয়, অনেক নিয়ম-কানুন আছে যা কেউই মানেন না। অনিয়মকে তারা নিয়মে পরিনত করেছেন।
সিভিল সার্জন ডাঃ এস এম আবদুল্লাহ আল মুরাদ জানান, এ ব্যাপারে বিজি প্রেস থেকে ছাপানো রুলস এন্ড রেজুলেশন বইয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু নেই। তবে বিএসআর বইয়ে ৫০০ গজের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপন করা যাবে না বলে বিধান রয়েছে। সরকারি হাসপাতালের গা ঘেঁষে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত।
তিনি বললেন, সিভিল সার্জন অফিস থেকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ব্যাপারে ডিজি অফিসের নির্ধারিত ফরম পূরণ করে মতামত দেয়া হয়। তাতে লোকেশন ফাইন্ড আউটের একটা ক্লজ আছে।
সিভিল সার্জন আরো বলেন, সরেজমিনে তদন্তপূর্বক ফরমটি পূরণ করার কথা। ডিজি অফিস লাইসেন্স দেয়ার মালিক। তারা কোথায় কীভাবে দিয়েছে তার জবাব আমি দিতে পারব না। বর্তমানে সরকার টোটাল বিষয়টি একটা সিস্টেমে আনার জন্য নতুন নিয়মে কাজ শুরু করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) অনলাইনে লাইসেন্স প্রদান করবে। তাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নতুন ও পুরনো হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সবকিছুই এসে যাবে। নতুন নিয়মে বিধিবর্হিভূত ভাবে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক উচ্ছেদ বা বাতিল হবে কিনা সেটি বলা যাচ্ছে না।
সূত্র মতে, শরীয়তপুরে সদর হাসপাতাল ঘিরে এতো অধিকসংখ্যক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন নজিরবিহীন। শুধু তাই নয়, জেলা শহরের একমাত্র আধুনিক চিকিৎসাস্থল শরীয়তপুর আধুনিক সদর হাসপাতালের সেবার মানও একেবারে নিচে নেমে গেছে। চরম অনিয়ম ও অব্যবস্থার কারণে রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সূত্র জানায়, ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে মোট ২৮ জন ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন। তার মধ্যে ২-৪ জন বাদে সবাই প্রাইভেট প্র্যাকটিসের নামে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগী দেখেন।
সূত্র মতে, হাসপাতালের ইমারজেন্সি দখলে রেখেছেন বিভিন্ন ক্লিনিকের দালালরা। হাসপাতালে রোগী আসা মাত্রই নানা কৌশলে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। একইভাবে ডাক্তাররাও রোগীদের বলেন, ‘হাতের কাছেই অত্যাধুনিক বেসরকারি হাসপাতাল আছে, টেস্ট হয় ভালো, যান ওখানে।’ এতে যথারীতি ওই ডাক্তারের নামে চলে যায় নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান সরদার জানালেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছেন না রোগীরা। বেসরকারি হাসপাতালেও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। স্বাস্থ্যসেবার নামে চলছে রীতিমতো ব্যবসা।
সদর হাসপাতালের সিংহভাগ রোগী ডাক্তারদের স্লিপ হাতে নিয়ে হাসপাতাল গেটের সামনে গড়ে ওঠা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে টেস্ট করাছেন।
অভিযোগ রয়েছে, সদরে অবস্থিত ক্লিনিক গুলো চটকদার প্রচার প্রচারণা করে রোগীদেরকে বিভ্রান্ত করছে।
সুধী সমাজের দাবি, চিকিৎসাসেবার নামে প্রতারণা না করে সুনির্দিষ্ট রুল জারিসহ জনগণকে সচেতন করতে সরকারের আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।